শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
গৌরনদীতে চোর সন্ধেহে গনপিটুনিতে আহত যুবকের দুইদিন পর মৃত্যু কুয়াকাটায় আগুনে পোঁড়া বন পরিদর্শন কলাপাড়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকলে সহায়তার দায়ে দুই শিক্ষককে অব্যাহতি সড়ক সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল বাড়িতে ছাগল ঢোকাকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর সংঘর্ষ, আহত-৪ বরিশালে ৬ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বরিশালের জেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উৎস করের নির্ধারিত ফি কম নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রমান পেয়েছে দুদক কলাপাড়ায় কৃষকদের অবস্থান ধর্মঘট ও স্মারকলিপি প্রদান কলাপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিএনপি কার্যালয়সহ ৫টি দোকান ভস্মীভূত কলাপাড়ায় ইউনিয়ন বিএনপির বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বাউফলে সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্থানীয়দের মানববন্ধন বছরের প্রথম দিনেই বিচ্ছিন্ন দীপ অঞ্চলে সহকারী পুলিশ সুপার বাউফলে গাঁজাসহ ২৫ লাখ টাকা ও স্বর্নালংকার উদ্ধার নববর্ষে দেশীয় খেলাধুলা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় মামলায় স্বাক্ষী হওয়ায় পা ভেঙ্গে দিলেন বিবাদীরা
ভৌতিক গ্রেফতারি পরোয়ানায় ৩৫ দিন কারাবাস

ভৌতিক গ্রেফতারি পরোয়ানায় ৩৫ দিন কারাবাস

Sharing is caring!

বরগুনা প্রতিনিধিঃ জীবনে কোনদিন ঢাকা যাননি বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঢলুয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোঃ বাদল মিয়া (৫৭)। তবু ঢাকার একটি ভৌতিক শিশু ধর্ষণের মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানায় ৩৫ দিন কারাবাস করেছেন তিনি। এজন্য তিনি অভিযুক্ত করেছে বরগুনা সদর থানায় কর্মরত এএসআই মোঃ সাইফুল ইসলাম ও এএআই মোঃ নাঈমুর রহমানকে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। একই সাথে অহেতুক কারাবাসের জন্য রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবি করেন তিনি।

বাদল মিয়ার সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর ডাক যোগে ঢাকার শিশু আদালতের প্রেরিত বাদল মিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে বরগুনার পুলিশ অফিসে। গ্রহণ করার পর এই গ্রেফতারি পরোয়ানা বরগুনার আদালতে পাঠায় পুলিশ। এরপর সেখান থেকে পাঠানো হয় বরগুনা সদর থানায়।

এরপর গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বাদল মিয়াকে গ্রেফতার করেন বরগুনা থানায় কর্মরত এএসআই নাঈমুর রহমান। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর টানা ৩৫ দিন কারাবাসের পর গত ১৮ জানুয়ারি জামিনের সাথে মামলা থেকে বাদল মিয়াকে অব্যাহতি দেয় আদালত।

জামিনের পাশাপাশি মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার আদেশে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উল্লেখ করেন, যে গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে বাদল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেখানে মামলা নম্বর লেখা হয়েছে জি.আর ৪২৫/১৭ ও শিশু ৮৯০/১৮ (ঢাকা)। এছাড়াও মামলা দায়েরের সাল ২০১৭ হলেও গ্রেফতারি পরোয়ানার বিচারকের স্বাক্ষর এর স্থলে তারিখ দেওয়া হয়েছে ৪ এপ্রিল ২০১৪।

অন্যদিকে বাদল মিয়াকে গ্রেফতারের পর সেই তথ্য ডাকযোগে ঢাকা জজ আদালতের শিশু আদালতে পাঠানো হলেও এ নামের কোন আদালত নেই বলে চিঠিটি ফেরত আসে। এছাড়াও বাদল মিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানায় উল্লেখ থাকা নম্বরে কোন মামলা বিচারাধীন নেই বলেও নিশ্চিত হয় বরগুনার আদালত। তাই বাদল মিয়াকে জামিনের পাশাপাশি এ মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাদল মিয়া অভিযোগ করেন, ‘শুধুমাত্র টাকার জন্য ভুয়া একটি গ্রেফতারি পরোয়ানায় পুলিশের সোর্স সাইফুল ও ইলিয়াস বরগুনা থানায় কর্মরত এএসআই নাঈমুর রহমান ও সাইফুল ইসলামের সাহায্যে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ঘৃণ্য অপরাধের মিথ্যা অভিযোগের অস্তিত্ববিহীন মামলায় ৩৫ দিন কারাভোগ করিয়েছে। তাই আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ বিষয়ে বাদল মিয়ার ছেলে রাকিব বলেন, গ্রেফতারের পর আমার বাবার জামিন আবেদনের জন্য ওয়ারেন্টের কপি নিয়ে আমি ঢাকা যাই মামলার কাগজপত্র তোলার জন্য। কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও গ্রেফতারি পরোয়ানায় উল্লেখিত আদালত আমি ঢাকার জজ কোর্টে পাইনি। ঢাকার জজ কোর্টে ৯টি নারী ও শিশু আদালত রয়েছে। প্রতিটি আদালতে ওয়ারেন্টে উল্লেখিত মামলা নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করে জানতে পারি- এরকম কোন মামলা ওইসব আদালতে বিচারাধীন নেই। তখন আমি নিশ্চিত হই- আমার বাবাকে ভুয়া এবং ভৌতিক একটি গ্রেফতারি পরোয়ানায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বরগুনা থানায় কর্মরত এএসআই নাঈমুর রহমান বলেন, বাদল মিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা বরগুনা থানায় এসেছে ২০১৮ সালে। তখন আমি পিরোজপুরে কর্মরত ছিলাম। আমি বরগুনা থানায় যোগদান করেছি গত বছরের ৬ নভেম্বর। সে হিসেবে আমি যোগদান করার দুই বছর আগেই বরগুনা থানায় বাদল মিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে। তাই আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাদল মিয়াকে গ্রেফতার করে আমি আইনানুগ প্রক্রিয়া অবলম্বন করি।

তিনি আরো বলেন, বাদল মিয়া নিভৃত গ্রামের একজন মানুষ। তিনি বা তার পরিবারের কারও সঙ্গেই আমার কোনো রকম পরিচয় কিংবা যোগাযোগ ছিল না। শুধুমাত্র গ্রেফতারের জন্যই তাকে আমি খুঁজেছি। এখানে আমার কোন দোষ নেই। তিনি শুধু শুধুই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে এএসআই মোঃ সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়াও যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলা পুলিশের সোর্স সাইফুল ও ইলিয়াসকে।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম তরিকুল ইসলাম বলেন, অন্যসব গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিদেরমতই বাদল মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখানে পুলিশের কোন দোষ নেই। কেননা সকল ক্ষেত্রে গ্রেফতারি পরোয়ানার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয় না পুলিশের।

তিনি আরো বলেন, যে বা যারা পুলিশের সঙ্গে প্রতারণা করে একজন নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি করেছে তাদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি। আমার বিশ্বাস- খুব শীঘ্রই তাদের আমরা আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD